রোগের বর্ণনা (Disease Description) :
কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) একটি অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হন না। সাধারণত: এক-দুই দিন পরপর মলত্যাগের বেগ হয় এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশন-ই কোষ্ঠকাঠিন্য বলে পরিচিত। ডাক্তারদের মতে কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায় তখনই এই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এ অবস্থায় পায়খানায় দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও মল পরিষ্কার হয় না।
রোগের কারণ (Causes)
• খাবারের কারণে: শাকসবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার কম খেলে।
• অনেকদিন বিছানায় শায়িত থাকলে।
• গর্ভাবস্থায়।
• বয়স বেশি হলে।
• ওষুধ: লৌহজাতীয় ওষুধ, অ্যান্টিকলিনার্জিক।
• মানসিক যন্ত্রণা, শোক, দুঃখ ইত্যাদি।
• লিভারের রোগ এবং পিত্তনালির বাধা।
• কোনো স্থান থেকে পড়ে যাওয়া বা পেটে আঘাত পাওয়া।
রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ (Symptom & Sign)
কোষ্ঠকাঠিন্য শনাক্ত করা কোন কঠিন বিষয় নয়। এই সমস্যায় সচরাচর যে লক্ষণগুলো দৃষ্টিগোচর হয় সেগুলো হল:
• মল শুষ্ক।
• শক্ত ও কঠিন মল।
• মলত্যাগে অনেক বেশি সময় লাগা।
• মল ত্যাগের জন্য অনেক বেশি চাপের
দরকার হওয়া।
• অধিক সময় ধরে মলত্যাগ করার পরও অসম্পূর্ণ মনে হওয়া।
• ক্ষুধা কমে যাওয়া।
• পেটে গ্যাস এবং ভার ভার বোধ হওয়া।
• মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভব।
• কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য রোগীর অরুচি, খাদ্য গ্রহণে অনিচ্ছা প্রভৃতি হতে পারে, ফলে রোগী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।
• প্রায়ই আঙ্গুল, সাপোজিটরি বা অন্য কোন উপায়ে মল নিষ্কাশনের প্রচেষ্টা।
কষা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য কোন রোগ নয়। পায়খানার বেগ হলেও নানা কারণে মলত্যাগ না করার ফলে এ রোগ হয়। বাংলাদেশের মহিলাদের এটি প্রায়ই দেখা যায়। কোন কারণ ছাড়াই যখন ১ দিনের বেশি পায়খানা হয় না বা মল খুব শুকনো বা শক্ত হয় যাতে সহজে নিষ্কাশন হয় না তাকে কথা পায়খানা বলে।
প্রতিরোধ (Prevention)
• কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই লাভের উদ্দেশ্যে অনেকে মল নরম করার ওষুধ যেমন ল্যাক্সেটিভ ব্যবহার করেন।
• মিষ্টি পাকা বরই চটকে খোসা ও বীজ ফেলে অথবা ছেঁকে অল্প পানি মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম হয়, বেলের শরবতও উপকারী।
• ৩০-৩৫ গ্রাম পাকা বেলের শাঁস প্রতিবারে ১ গ্লাস পানিতে শরবত তৈরী করে দিনে ২ বার সেবন করতে হয়। এভাবে কমপক্ষে ৫-১০ দিন বেলের শরবত পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। • প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গরম পানি পান করতে পারেন।
• কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে প্রতিদিন বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
• তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া ও মাংস খাওয়া কমাতে হবে।
• প্রতিদিন সকালে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারে।
• অধিক দুশ্চিন্তা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি কারণ। তাই দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
• অনেকে মনে করেন রুটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে কিন্তু আটা, বিশেষ করে লাল আটায়