অ্যাকোনাইট স্বল্পসময়ের জন্য কার্যকরী একটি ওষুধ। এর লক্ষণগুলি দীর্ঘ স্থায়ী হয় না। খুব বেশি পরিমাণে এই ওষুধটির ব্যবহারে মারাত্মক বিষাক্ত অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং রোগীর মৃত্যু না ঘটলে খুব দ্রুত সৃষ্ট রোগ লক্ষণগুলি চলে যায়; ফলে রোগী অনতিবিলম্বে রোগমুক্ত হয়। এই ওষুধ ব্যবহারের পরিণতিতে কোন ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী রোগের সৃষ্টি হয় না। খুব বড় একটা ঝড়ের মত এই ওষুধের ক্রিয়া দ্রুত সৃষ্টি হয় এবং খুব দ্রুতই আবার মিলিয়ে যায়। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারা যাবে যে ঐ সব দুর্বলতা বা রোগ লক্ষণগুলি কি ধরনের এবং কোন ধরনের রোগীতে ঐরূপ অবস্থা বা হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া রোগ লক্ষণগুলি দেখা যাবে। যদি হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গী ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আমরা লক্ষ্য করি তা হলে স্মরণ করা যাবে যে তীব্র ধরনের রক্তোচ্ছাসযুক্ত বা প্লেথরিক ব্যক্তিদের ঠান্ডা লাগলে তারা মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, অথচ যারা দুর্বল, প্রায়ই নানা ধরনের অসুখে ভোগে তারা যে কোন তীব্র ও তরুণ (অ্যাকিউট) রোগে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে কিন্তু তারা খুব মারাত্মকভাবে এবং হঠাৎ ঐ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় না। এইসব দেখে এবং অ্যাকোনাইটের হঠাৎ দেখা দেওয়া লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই দেখা যাবে যে যারা অ্যাকোনাইটের মত লক্ষণে আক্রান্ত হয় তারা সবাই প্লেথারক ধরনের। বলবান ও ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তি এবং শিশু যারা সামান্য ঠান্ডা লাগলেই অসুস্থ হয় না কিন্তু খুব বেশি বা তীব্র ধরনের ঠান্ডায় বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাদের দেহের আচ্ছাদনের স্বল্পতার জন্য, হঠাৎ আবহাওয়ার খুব বেশি পরিবর্তনে, দীর্ঘদিন ধরে ঠান্ডা কিন্তু শুকনো উত্তুরে হাওয়ায় তাদের ঠান্ডা লেগে যায়। স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি কাপড়-চোপড়ের স্বল্পতার জন্য অথবা শীতকালের তাঁর ঠান্ডা ও শুকনো হাওয়াতে খুব দ্রুত এমনকি রাত্রের আগেই তীব্র ধরনের লক্ষণসহ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। এইসব ধরনের প্লেথরিক ও স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি, যাদের মজবুত হৃহৃৎপিণ্ড, খুব কার্যকরী মস্তিষ্ক এবং রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থাও খুব দৃঢ় তারা মারাত্মক ধরনের ঠান্ডায় বা ঠান্ডা লেগে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে অ্যাকোনাইটের প্রয়োজন হবে। প্রদাহের পরবর্তী লক্ষণসমূহ সাধারণত অ্যাকোনাইট-এ দেখা যায় না। ঝড়টা এত দ্রুত চলে যায় যে তাতে কেবলমাত্র প্রাথমিক অবস্থাটারই প্রাবলা থাকে। ঐ সব তীব্রভাবে আক্রান্ত রোগীর দেহে হঠাৎ দেখা দেওয়া রক্তাধিক্য বা রক্তোচ্ছাস ওষুধটির সুফলে দ্রুত সেরে যায়। রোগীর আকস্মিক ও বিভীষিকাময় মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখা দিলেও রোগ নিরাময় দ্রুত সংঘটিত হয়। সুতরাং ডানহাম সাহেবের মতই এটাকে হঠাৎ ওঠা ও দ্রুত সরে যাওয়া ঝড়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এই ওষুধটির সম্পর্কে তাঁর মেটেরিয়া মেডিকায় আলোচনা খুবই কবিত্বময় এবং মূল্যবান।
সব আক্রমণই শুল্ক ধরনের ঠান্ডা লেগে হঠাৎ দেখা দেয়। প্লেথরিক শিশুদের হঠাৎ মস্তিষ্কে খুব বেশি রক্তাধিক্য ও উচ্চ জর অথবা তড়কা বা কনভালসন দেখা দেয়। এই রকম হঠাৎ তীব্রধরনের আক্রমণ দেহের যেকোন যন্ত্রাংশ বা অগ্যান যথা মস্তিষ্ক, ফুসফুস, লিভার, রক্তসঞ্চালন প্রণালী, কিডনী প্রভৃতিতে দেখা দিতে পারে। যে সব রোগলক্ষণ হঠাৎ শীতকালের খুব বেশি ঠান্ডায় অথবা গ্রীষ্মকালের অত্যধিক গরমে দেখা দেয় সে সব ক্ষেত্রে এই ওষুধটি খুবই ফলপ্রদ। ওষুধটিতে শীতকালে মস্তিষ্ক ও ফুসফুস আক্রান্ত হওয়া এবং গ্রীষ্মকালে পাকস্থলী ও অস্ত্রের প্রদাহ ও গোলযোগের লক্ষণ দেখা যায়। আমরা জানি প্লেথরিক বা যাদের দেহে রক্তাধিক্য রয়েছে তারা হঠাৎ অতিরিক্ত গরমে কি মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাদের এই হঠাৎ আক্রমণের ভয়াবহতা খুবই ভীতিকর। প্রদাহের সঙ্গে রক্তসঞ্চালন প্রণালী খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে; হার্টের ক্লিয়ার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, মস্তিষ্কের ভয়াবহ গোলযোগ, তীর শত্রু বা মানসিক আঘাত ও ভয় দেখা দেয়।
অ্যাকোনাইটের তীব্র অবস্থার সঙ্গে যে সব মানসিক লক্ষণ দেখা দেয় তারা খুব দ্রুতই আবার চলে যায়। রোগী তার অসুস্থতার ভয়াবহতা নিজেই অনুভব করতে পারে, কারণ, সে খুব বেশি স্নায়বিক উত্তেজনার মধ্যে থাকে। তার চেহারা ও হাবভাবের মধ্যেই ভীতি প্রকট হতে দেখা যায়। তার হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া এত তীর হয় যে প্রথমেই তার মনে হয় যেন সে মারা যাচ্ছে। এই মৃত্যুভয় তাকে আরও ভাঁত করে তোলে। অনেক ক্ষেত্রে সে মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বাভাষও ঘোষণা করে। এইরূপ তীর মৃত্যুভয়, এই ভীতিকর উদ্বেগ ও আতঙ্ক, অস্থিরতা, আক্রমণের তীব্রতা ও আকস্মিক দ্রুততা দেখলে তা সম্ভবত অ্যাকোনাইটের বিষক্রিয়ার ফল অথবা ঐরূপ ক্ষেত্রে অ্যাকোনাইটের প্রয়োজন বলে মনে হবে। কোন ক্ষেত্রে অ্যাকোনাইটের এইরূপ বিষক্রিয়ার মত লক্ষণ দেখা গেলে ওষুধটির ক্ষুদ্রতম ডোজের প্রয়োগ করতে হয়। ওষুধটির ক্রিয়াকাল যে খুবই ক্ষণস্থায়ী সে কথাটা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে।
দেহের যেকোন স্থানেই প্রদাহ দেখা যেতে পারে, তাই পূর্বের বর্ণনা অনুযায়ী রোগীর চেহারা, আচার-আচরণ প্রভৃতিকেই প্রাধান্য দিতে হবে, যেমন, তার মুখমন্ডলের চেহারা, মানসিক লক্ষণ, অস্থিরতা, আক্রমণের তীব্রতা প্রভৃতি। আকোনাইট-এ ভয় ও উদ্বেগের লক্ষণ এত প্রবল থাকে যে অনেক ক্ষেত্রে ছোটখাট ও কম গুরুত্বপূণ মানসিক লক্ষণগুলি তাদের জন্য ঢাকা বা চাপা পড়ে যায়। রোগী বন্ধুদের প্রতি তার প্রীতি বা ভালবাসা হারিয়ে ফেলে, তাদের প্রতি সে আর কোন আকর্ষণই বোধ করে না, মানসিক দিক থেকে সে যেন উদাসীন হয়ে পড়ে।
যে সব লক্ষণের কথা এখানে বর্ণনা করা হল, মেটেরিয়া মেডিকাতে তা একমাত্র অ্যাকোনাইট ছাড়া অন্য কোন ওষুধেই দেখা যাবে না, অন্য ওষুধের সঙ্গে আঅ্যাকোনাইটের তুলনা করলেই এটা বোঝা যাবে। অন্য কোন কোন ওষুধের কিছু, কিছ, লক্ষণ অ্যাকোনাইটের সঙ্গে মিললেও সমবেতভাবে সে সব লক্ষণ কেবল মাত্র অ্যাকোনাইটে, দেখা যায়। মানসিক লক্ষণের কথা ধরলে দেখা যাবে যে তাদের তীব্রতাই প্রধান। ডিলিরিয়ামের ক্ষেত্রে তীব্র উত্তেজনা, তাঁর ভয় ও উদ্বেগ বা আশঙ্কা দেখা দেয়, ভয় ও উদ্বেগে রোগী কোঁদে ফেলে, মনে হয় সে ভীষণ কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছে, রোগী কেন কাঁদছে সেটা হয়ত প্রথমে বোঝা যাবে না। অ্যাকোনাইটের এই ভয় অন্যানা মানসিক লক্ষণের সঙ্গে মিশে থাকে, রোগী খিটখিটে হয়ে পড়ে, বিলাপ করে, ভীষণ রেগে যায়, জিনিসপত্র ছোঁড়ে বা ভাঙ্গচুর করে এবং তার সঙ্গে একটা উন্মত্তভাব ও আতঙ্ক মিশে থাকে।
রোগী বেদনা ও যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে। এই বেদনা বা যন্ত্রণা যেন আঘাত লাগা, বিধে যাওয়া, কেটে যাওয়া বা সূচ ফোটানোর মত বোধ হয়। স্নায় আক্রান্ত হয়ে স্নায়বিক বেদনা হলে তা খুবই তাঁর ধরনের হয়, রোগীর মনে হয় যেন তার ভীষণ একটা কিছু হয়েছে, তা না হলে এত কষ্ট হত না। প্রামাণ্য গ্রন্থে বলা হয়েছে যে রোগী মৃত্যুর নির্দিষ্ট দিন বা সময় ঘোষণা করে। এর প্রধান কারণ, রোগের ভয়াবহতা ও তীব্রতা তাকে মুহামান করে তোলে। অ্যাকোনাইটের এই ধরনের মানসিক লক্ষণ নিউমোনিয়া, দেহের যে কোন অংশের যেমন, কিডনী, লিভার, অ্য প্রভৃতির প্রদাহে সর্বদাই দেখা যাবে।
এই সব লক্ষণের সঙ্গে ডিজিনেস অর্থাৎ মাথাঘোরার সঙ্গে হতবুদ্ধিভাব সর্বদাই থাকে, সামানা নড়াচড়া বা এপাশ-ওপাশ করলেই মাথাঘোরা দেখা দেয়। এক ভদ্রমহিলা কিছু কেনাকাটা করতে বেরিয়ে হঠাৎ রাস্তায় কুকুরের তাড়া খেয়ে দৌড়োতে শুরু, করেন এবং এত তাঁর মাথাঘোরায় আক্রান্ত হন যে তাঁর গাড়ীর কাছেও পৌঁছোতে পারেন না। ভয় থেকে মাথাঘোরা এবং হঠাৎ পাওয়া ভয় থেকেই যায়। এই ভাঁতিটা থেকে যাওয়ায় ওপিয়ামের দিকে সেজন্য আমাদের চিন্তা আকৃষ্ট হতে পারে। কিন্তু ভয় থেকে সৃষ্ট যে কোন উপসর্গ, ভয় থেকে মস্তিষ্কের প্রদাহ, ভয় থেকে মাথাঘোরা, এমন কি ভয় থেকে দেহের যে কোন অংশে রক্তাধিক্য ঘটা অ্যাকোনাইটের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই ভয় থেকে সব ধরনের অনুভূতিতেই গোলযোগ দেখা দিতে পারে, সব কিছুই যেন ঘুরে চলেছে বলে রোগীর মনে হবে।
মাথাধরা বর্ণনাতীতভাবে তীর হয়। মস্তিষ্কে, মাথার তালুতে ছিড়ে যাওয়া, জলে যাওয়া এবং তার সঙ্গে ভাঁতি, উদ্বেগ ও জ্বর থাকতে পারে; হঠাৎ ঠান্ডা লেগে, নাকের সদি বসে গিয়ে মাথাধরা দেখা দিতে পারে। প্লেথরিক রোগীদের হঠাৎ ঠান্ডা লেগে, শুকনো ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়, শীতকালের ঠান্ডার মধ্যে বেড়ানো, ঘোড়ায় চড়া প্রভৃতির জন্য হঠাৎ সদি বন্ধ হয়ে চোখের উপরের অংশে তীব্র বেদনা, মস্তিষ্কে রক্তাধিক্য ঘটে মাথাধরা এবং সেই সঙ্গে উদ্বেগ ও আশঙ্কা, মুখমণ্ডল গরম হয়ে ওঠা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
চোখের বিভিন্ন উপসর্গে অ্যাকোনাইট প্রয়োজন হতে পারে। চোখে হঠাৎ প্রদাহ, রক্তাধিকা, রক্তজমা হয়ে লাল হওয়া, চোখ ও তার চারপাশের সব টিসুতেই হঠাৎ প্রদাহ, কনজাংকটিভাইটিস প্রভৃতি হঠাৎ ঠান্ডা লেগে অথবা শুকনো ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরেই এই ধারণা প্রচলিত আছে যে, যে কোন প্রদাহের প্রথমাবস্থায় অ্যাকোনাইট দিতে হবে। প্রায় সব পুস্তকে এই কথা লেখা থাকলেও এটি ঠিক নয়, কারণ কোন ধরনের কনসটিটিউশন অর্থাৎ শারীরিক ও মানসিক গঠন, বা কি কারণে ঐ প্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে সে কথা ঐ সব বইয়ে লেখা নেই। কাজেই ঐ ভাবে রোগের চিকিৎসা করা ঠিক নয়। প্রতিক্ষেত্রে এই অ্যাকোনাইট প্রয়োগের উপযুক্ত লক্ষণ আছে কিনা সেটা বিচার করে দেখতে হবে এবং প্রয়োজনে অন্য ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
যে কোন জ্বরের প্রথমাবস্থায় অ্যাকোনাইট প্রয়োগ করার একটা প্রবণতা প্রাচীর-পন্থী চিকিৎসকদের মধ্যে দীর্ঘ কাল ধরে চলে আসছে, কিন্তু এই পদ্ধতিটিও ভুল।
অ্যাকোনাইট-এ চোখের প্রদাহ হঠাৎ ও এত দ্রুত ঘটে যে কি করে সেটা সম্ভব তা ভেবে অবাক হতে হয়। চোখ খুব বেশি ফুলে ওঠে কিন্তু তা থেকে কোন রস বা প্রাব বেরোয় না, অথবা খুব সামান্য একটা তরল স্রাব বা মিউকাস দেখা যেতে পারে। হঠাৎ দেখা দেওয়া প্রদাহের সঙ্গে ঘন রস বা পুঁজের মত বেরোলে তা কখনও অ্যাকোনাইট-এর লক্ষণ নয়। অ্যাকোনাইটের প্রদাহের কোন প্রতিফলন হয় না, প্রদাহের পরবর্তী ফলস্বরূপ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিলে, অন্য ওষুধের কথা চিন্তা করতে হবে। জ্বরের সঙ্গে অ্যাকোনাইটের রোগীর বিশেষ চেহারা ও চরিত্রগত মিল না থাকলে সেক্ষেত্রে অ্যাকোনাইট ব্যবহার করা চলবে না। অ্যাকোনাইটের জ্বরের সঙ্গে আলোয় চোখে স্পর্শকাতরতা থাকে, জরের সঙ্গে খুব বেশি অস্থিরতা দেখা দেয়, চোখের দৃষ্টি পলকহীন হয় এবং পিউপিল সংকুচিত অবস্থায় থাকে, চক্ষু গোলকের গভীর অংশে তাঁর ধরনের কামড়ানো ব্যথা ও প্রদাহ প্রভৃতি লক্ষণ থাকলে তবেই অ্যাকোনাইট প্রয়োগ করা যাবে। কোন প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে, পেকে যাবার মত লক্ষণ অথবা মিউকাস মেমব্রেনে পাঁজ সৃষ্টি হলে কখনই সেটা অ্যাকোনাইটের লক্ষণ নয়। স্কারলেট জর, টাইফয়েড জ্বর প্রভৃতি রক্তদ্দষণের মত অবস্থায় কখনও অ্যাকোনাইটের প্রয়োগ করা চলে না, কারণ ঐ সব ক্ষেত্রে অ্যাকোনাইটের তীব্রতার লক্ষণ থাকে না। ঐ সব ক্ষেত্রে স্নায়বিক উত্তেজনা বা ইরিটেশনের বদলে আচ্ছন্নতা বা অবসন্নতা থাকে, ত্বকে গোলাপী আভা থাকে কিন্তু অ্যাকোনাইটে ত্বক উজ্জল লালবর্ণ ধারণ করবে। জাইমোসিস বা দেহে বহিরাগত জীবাণ, বৃদ্ধিজনিত কোন রোগের জন্য অ্যাকোনাইটের ব্যবহার চলে না, কারণ অসুস্থ দেহে জীবাণু বৃদ্ধি ঘটার মত কোন লক্ষণ বা ইতিহাস জানা যায় না। নীচু ধরনের কোন কন্টিনিউড বা একজরী অবস্থায় ম্যাকোনাইটের কথা চিন্তা করা যায় না। অ্যাকোনাইটের জর সাধারণত খুব হঠাৎ দেখা দেয়, স্বল্পস্থায়ী ও তীব্র ধরনের হয়, সবিরাম বা ইন্টারমিটেন্ট ধরনের জার এই ওষুধে দেখা যায় না। কোন সবিরাম জ্বরের প্রথম আক্রমণের তীব্রতায় অনেকক্ষেত্রে অ্যাকোনাইট প্রয়োগের প্রয়োজন মনে হলেও শীঘ্রই দ্বিতীয় বা পরবর্তী আক্রমণে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হবে, অ্যাকোনাইট প্রয়োগের পথও রুদ্ধ হবে। কোনও কোন ওষুধে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত একটা নির্দিষ্ট ব্যবধানে রোগাক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়, কিন্তু অ্যাকোনাইটে সেরূপ হয় না। হঠাৎ দেখা দেওয়া জর একরাত্রেই কমে গেলে সেটাই অ্যাকোনাইটের জর, তা না হলে বুঝতে হবে যে ভুলভাবে অ্যাকোনাইট প্রয়োগ করা হয়েছে এবং সে সব ক্ষেত্রে ওষুধটি রোগীর ক্ষতিও করতে পারে। রোগাবং সমুদয় লক্ষণ বিচার করেই ওষুধ নির্বাচন করতে হয়; কোন কোন উপসর্গ ওষুধটির সঙ্গে মিলছে সেটা বিচার না করে কি কি উপসর্গ ওষুধটির সঙ্গে মিলছে না সেটাই বিচার্য।
অ্যাকোনাইটে চোখের প্রদাহ ও সেইসঙ্গে জালা এবং হঠাৎ স্ফীতি দেখা দেয়; পাতা এত দ্রুত ফুলে যায় যে খুব কষ্ট করে চোখ খুলতে হয়; জোর করে ফরসেপ দিয়ে চোখের পাতা খোলা হলে কয়েক ফোঁটা গরম জল বেরিয়ে আসবে কিন্তু কখনও পাঁজ হতে দেখা যাবে না। হঠাৎ ঠান্ডা লেগেই এই অবস্থা ঘটে। দেহের যে কোন অংশের মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ ঘটলে সেখান থেকে রক্ত মেশানো জলের মত সাব নির্গত হয়। হঠাৎ ধমনী বা শিরায় রক্তাধিক্য বা এনগর্জমেন্ট ঘটে এবং তা ফেটে গিয়ে অথবা সুক্ষন শিরা বা উপশিরা (ক্যাপিলারী) চুইয়ে রক্ত বা রস নির্গত হয়।
কানের প্রদাহও হঠাৎ দেখা দিতে পারে। কানে দপ দপ্ করা এবং তীব্র ধরনের কেটে যাবার মত ব্যথা বোধ হয়। উত্তরেব হিমেল হাওয়ায় বাইরে খেলাধূলো করে বা বেড়িয়ে আসার পরে শিশুটির প্রতি যথাযথ যত্ন না নেওয়া হলে সে চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে এবং বার বার কানের ভিতরে আঙ্গুল দিতে থাকে। দিনের বেলা বাইরের ঠান্ডায় ঘুরলে বিকেল বা সন্ধ্যাতেই এইরূপ আক্রমণ হতে দেখা যাবে, জ্বর এবং আতঙ্ক থাকে, এবং শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। এই কষ্ট বা যন্ত্রণা খুবই তাঁর হয়, কোনরূপ গোলমাল বা শব্দও সহ্য হয় না, কানের অনুভূতি এত তাঁর হয় যে গান-বাজনার শব্দও যেন তার দেহের প্রতিটি অঙ্গে ঢুকে পড়ছে বলে বোধ হয়। দেহের যে কোন অংশের স্নায়ুতেই এইরূপ স্পর্শকাতরতা দেখা যাবে। যে কোন উপসর্গেই আক্রমণের তীব্রতা ও ভয়াবহতা দেখা যাবে এবং রোগী খুব উদ্বিগ্ন ও খিটখিটে হয়ে পড়বে। কানে হল ফোটানো, জ্বালা করা, চিরে যাওয়া, ছিড়ে যাওয়া বা কেটে যাবার মত ব্যথা বোধ হয়।
দিনের বেলা ঠান্ডা লাগার পরে রাত্রিতেই হঠাৎ ভীষণ-মাথাধরার সঙ্গে নাক থেকে জলের মত সদি বা কোরাইজা দেখা দিলে এই স্বল্পস্থায়ী কিন্তু দ্রুত কার্যকরী ওষুধটি নির্বাচন করতে হয়। কার্বোভেজ-এ যে কোরাইজা দেখা যায় সেটা ঠান্ডা লাগার বেশ কয়েকদিন পরে ঘটে, সালফার-এ ৩ তাই দেখা যায়। কার্বোভেজ-এ রোগী গরমে খুব বেশি উত্তপ্ত হবার পরেও গায়ের জামা-কাপড় খুলে না ফেলার জন্য তার ঠান্ডা লাগে। অ্যাকোনাইটে রোগী তার সামান্য জামা-কাপড়েই বাইরের ঠান্ডা হাওয়ায় বেড়িয়ে আসার পরে, এবং সে যদি প্লেথরিক হয় তা হলে মধ্য রাত্রির আগেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
যে সব শিশু মোটা-সোটা এবং দেহে রক্তাধিক্য (স্লেথরা) থাকে, বিশেষ ভাবে তাদের কোরাইজায় এই ওষুধটি প্রায়ই প্রয়োজন হয়। কিন্তু যেসব শিশু রুগ্ণ, দুর্বল ও ফেকাশে তাদের জন্য ওষুধটি উপযুক্ত নয়। এইসব রুগুণ, দুর্বল শিশুরা একটু দেরিতে আক্রান্ত হয়, তাদের দেহের প্রতিরোধ শক্তি এত দুর্বল যে তাদের দেহে উপসর্গগুলি দেখা দিতে। দু-একদিন দেরি হয়। একই পরিবারের একটি দুর্বল ও রুগ্ণ শিশু এবং একটি স্বাস্থ্যবান শিশুকে যদি একই সঙ্গে ঠান্ডায় বেড়িয়ে এসে ঠান্ডা লাগানো হয় তা হলে একজনের প্রথম রাত্রিতেই রূপ, বা খুসখুসে কাশি দেখা দেবে এবং তাকে অ্যাকোনাইট দিতে হবে, কিন্তু অপর শিশুটি পরদিন সকালে আক্রান্ত হবে এবং তাকে "হিপার দিতে হবে।
কোরাইজার সঙ্গে যে সব আনুষঙ্গিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে হলে, নাক থেকে রক্তপড়া, মাথাধরা, উদ্বেগ ও ভয়। প্রধানত এই উদ্বেগ ও ভীতির বিশেষ একটা বহিঃপ্রকাশ অ্যাকোনাইটের রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই ওষুধটির নিউমোনিয়াতে রোগীর মুখমন্ডলেই একটা বিশেষ ছাপ দেখা যায়, মুখের দিকে তাকালেই সেখানে একটা ভয়ানক উদ্বেগ বা আতঙ্কের চিহ্ন দেখা যাবে। মুখমণ্ডলের বহিঃ- প্রকাশের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেহের অভ্যন্তরে কি ঘটেছে সেটা বোঝা যায়; সুখ, দুঃখ, হতাশা প্রভৃতি একবার দৃষ্টিপাতেই আলাদা ভাবে বোঝা সম্ভব, সেই বিশেষ উদ্বেগ বা আতঙ্কের ছাপ আমরা দেখতে পাব।
একদিকের গাল লালচে কিন্তু অপর দিকেরটা ফেকাশে এই অবস্থা অনেক ওষুধেই পাওয়া যায়, কিন্তু উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ, ভীতি, উত্তাপ, অস্থিরতা এবং যে আকস্মিকতার সঙ্গে তা আসে প্লেথরিক রোগীদের ক্ষেত্রে, বিশেষত আগের দিনই যেখানে গাল শুকনো ও স্বাভাবিক ছিল, সেক্ষেত্রে এই একটি লক্ষণের উপর নির্ভর করে নিশ্চিস্ব ভাবে নির্ভর করে অ্যাকোনাইট দিতে হবে। অন্য বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ থাকলে অবশ্য অ্যাকোনাইট ছাড়া অন্যান্য ওষুধের কথাও চিঙ্গা করা প্রয়োজন। মুখমণ্ডলে স্নায়বিক বেদনায় গনে নয় যেন গরম দড়ি বা তার মুখের যে কোন দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। খোলা ঠান্ডা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ানোর ফলে মুখমণ্ডলে ঠান্ডা লাগে, ফলে প্রথমে মুখমণ্ডল অসাড় বোধ হয়, পরে তীব্র ধরনের বেদনা শুরু হয়। ছুরি দিয়ে কেটে দেবার মত বেদনায় সে চিৎকার করে বা কাঁপে; অ্যাকোনাইট এই বেদনার উপশম ঘটাবে। পিঁপড়ে চলার মত সুড়সুড় করা, হামাগুড়ি দিয়ে যেন কিছু চলেছে এরূপ বোধের সঙ্গে বেদনা অথবা বেদনাহীনতা পাওয়া যেতে পারে। মুখমণ্ডলে ভীষণ উত্তাপসহ জ্বর, শুয়ে থাকলে মুখের যে পাশ চাপা পড়ে সেদিকে ঘাম দেখা দেয় কিন্তু রোগী পাশ ফিরলে ঐ দিকটা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে শুকনো হয়ে যায় এবং চাপা থাকা অংশে ঘাম হতে আরম্ভ করে।
দাঁতের যন্ত্রণায় এটি খুবই আরামদায়ক ওষুধ। দাঁতের বেদনায় এটি এতই ফলপ্রদ যে অনেকেই জানেন যে একটুখানি তুলোয় একফোঁটা অ্যাকোনাইট ফেলে পুরানো গর্ত হয়ে যাওয়া দাঁতে লাগালে সঙ্গে সঙ্গে বেদনা চলে যাবে। প্রায়ই ওষুধটি বেদনা বন্ধ করার জন্য সাময়িক ভাবে কাজে লাগে; কিন্তু দাঁতের যন্ত্রণার তীব্রতা যদি শুকনো অথচ ঠান্ডা হাওয়া লেগে, প্লেথরিক রোগীদের ক্ষেত্রে দাঁতের গর্তে তীব্র ধরনের কেটে যাওয়া, তীরের মত ছুটে চলা বেদনা দেখা দের তা হলে অ্যাকোনাইট সেই অবস্থাকে সারাতে সক্ষম। কখনও কখনও এই বেদনা সুস্থ দাঁত এমনকি সম্পূর্ণ দাঁতের পাটিতেও দেখা দেয়। যে কোন ভাবে ঠান্ডা লেগে দাঁতে তাঁর বেদনা দেখা দিলে এক ডোল অ্যাকোনাইট ব্যবহারেই রোগী খুব দ্রুত আরাম বোধ করে, বেদনাও চলে যায়।
স্বাদের পরিবর্তন, পাকস্থলীর গোলযোগ, জলছাড়া সবকিছু তেতো লাগে এবং সেই জন্য অ্যাকোনাইটের রোগীর জল পানের জন্য তাঁর বাসনা থাকে, মনে হয় যেন সে প্রয়োজন মত যথেষ্ট পান করার মত জল পাচ্ছে না।
পৌঁছালেই বমি হয়ে যায়, কটু, ঝাল বা উগ্র জিনিস খেতে চায়, কোন কিছুই তার মুখে যথেষ্ট তেতো মনে হয় না। তবুও খাদ্যের স্বাদ তার মুখে তেতো লাগে, জল ছাড়া সব কিছুই তেতো বোধ হয়।
গ্যাসট্রিক ক্যাটার বা পাকস্থলীতে তীক্ষন ও খুব দ্রুত সৃষ্টি হওয়া একধরনের প্রদাহ, ওক ওঠা, পিত্তবমি অথবা রক্তবমি হয়, পাকস্থলী খালি থাকলে বমি করার চেষ্টা দেখা গেলেও কিছুই ওঠে না। এই লক্ষণের সঙ্গে আশঙ্কা ও উদ্বেগ, অস্থিরতা এবং মৃত্যুভয় থাকে।
লিভারের প্রদাহে অ্যাকোনাইট একটি কার্যকরী ওষুধ, বার বার দেখা দেওয়া আক্রমণে নয়, হঠাৎ ঘটা প্রথম আক্রমণে এটি ফলপ্রদ হবে। লিভারের ভয়ানক প্রদাহের সঙ্গে তীব্র ধরনের ছিড়ে যাবার মত বেদনা ও জ্বালাও পরে দেখা দেয় অস্থিরতা, আতঙ্কজনিত কষ্ট, অনবরত বিলাপ করা, মৃত্যুভয়, মুখমণ্ডলের লালবর্ণ, চোখে চক- চকে ভাব এবং তীর পিপাসা।
পেটের গোলযোগে তীরের বা বন্দুকের গুলি ছুটে যাবার মত ঝিলিক দেওয়া ব্যথা, জ্বালা, খুল ফোটানোর মত ব্যথা, বিশেষত শীতল আবহাওয়ায় ঠান্ডা লেগে উপসর্গের সৃষ্টি হলে দেখা দেয়। উপসর্গটা কোথায় দেখা দিচ্ছে বা ঘটছে বা তার বদলে সে প্রকৃতই অ্যাকোনাইটের রোগী কিনা সেটাই আমাদের দেখা উচিত। পেটের কোন যন্ত্র বা অগানেই আমরা প্রদাহ পেতে পারি, সেটা ক্যাটারাল বা শ্লেষ্মাজনিত ভয়াবহ প্রদাহ হতে পারে। এটা অন্ত্রের নিচের দিকের অংশ অথবা রেক্টাম বা পায়তে দেখা যেতে পারে এবং তখন ডিসেপ্টি বা আমাশয়ের লক্ষণ পাওয়া যাবে। আমাশয়ের ক্ষেত্রে কমোড বা পায়খানার প্যানে টাটকা রক্ত এবং অল্পকিছু আম বা মিউকাস দেখতে পাব। রোগীর পক্ষে পায়খানা ছেড়ে চলে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, অল্প রক্তবমি অথবা রক্ত মেশানো আম মলের সঙ্গে বেরোয়। রেগী প্রায় সব ক্ষেত্রেই বলে যে সে আজ রাত্রে অথবা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যাবে। হাব-ভাবে মনে হয় যেন সে মৃত্যুর একটা অনুভূতি সে বুঝতে পারছে। তার সারা দেহে ও মনে একটা ক্লেশের ছাপ থাকে কিন্তু কোঁথানি, পেটে ক্যাম্প বা সংকোচনজনিত ব্যথা এবং মলত্যাগের ইচ্ছা খুবই হয়। জলের মত পাতলা মল থাকলে হেরিঙ সাহেব খুব গুরুত্ব দিলেও সেটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না কিন্তু টাটকা রক্ত ও আমে ভীষণ কোঁথানির সঙ্গে নির্গত হলে অথবা শিশুদের গ্রীষ্মকালীন পেটের গোলযোগে অল্প পরিমাণে সবুজ রঙের আম, হঠাৎ জ্বরের সঙ্গে টাটকা রক্ত বা ঘাসের মত সবুজ মল যদি বেরোতে দেখা যায় এবং ঐ সব শিশু, যদি উজ্জ্বল গোলাপী আভাযুক্ত গঠনের হয় তা হলে ঐ সব উপসর্গে অ্যাকোনা প্রযোজ্য হবে। শিশুদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্দ্রে গোলযোগ অতিরিক্ত গরমে দেখা দেয়। উত্তাপে শিশুর লিভারে প্রদাহ হবার ফলে মনে দুধের মত সাদা ও পুটিং এর মত আঠালো হয়, শিশুটি হলদেটে হয়ে যার এবং পেটের বেদনায় চিৎকার করে কাঁদে।
মুত্রনলী ও কিডনীর গোলযোগেও অ্যাকোনাইট কার্যকরী যদি প্রদাহ ও রঙ মেশানো প্রস্রাব থাকে। প্রস্রাব খুব কম বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে; মুত্রথলীতে প্রস্রাব জমে থাকলেও নির্গত হয় না অথবা তৈরিই হয় না। কোনও শক্ থেকে প্রস্রাব আটকে যেতে পারে। সদ্যোজাত শিশুদের শত্রু থেকে প্রস্রাব আটকে গেলে অ্যাকোনাইট খুবই ফলপ্রদ হয়। মুত্রথলীতে প্রদাহের সঙ্গে কেটে যাওয়া বা ছিড়ে যাবার মত বেদনা, জালা করা বেদনা প্রস্রাব গরম, কালচে লাল বর্ণের হয়, লাল অথচ পরিষ্কার অথবা রক্ত মেশানো থাকে। শিশুদের ঠান্ডা লেগে হঠাৎ প্রস্রাব আটকে যাওয়া এবং তার সঙ্গে কান্না ও অস্থিরতা দেখা যায়। বয়স্ক লোক অথবা শিশু যেই হোক না কেন তার মুত্রথলির প্রদাহের সঙ্গে অ্যাকোনাইটের প্রকৃত মানসিক লক্ষণ থাকা দরকার।
হঠাৎ দেখা দেওয়া তাঁর ধরনের অকইিটিস বা অণ্ডকোষের প্রদাহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাকোনাইটে নিরাময় হয়। প্রেথরিক অবস্থার লোকেদের ঠান্ডায় অথবা যে কোন ভাবে খুব বেশি ঠান্ডা লেগে অন্ডকোষের প্রদাহে অ্যাকোনাইট নির্দিষ্ট ওষুধ। কিন্তু গনোরিয়ার স্রাব বন্ধ হয়ে সাধারণত অকাইটিস হলে এই ওষুধটি ফলপ্রদ হবে না।
মহিলারা তাদের অনুভূতিপ্রবণতার জন্য স্বাভাবিকভাবেই অ্যাকোনাইট প্রয়োগের উপযুক্ত ক্ষেত্র। সাধারণত স্নায়বিক কারণে শক হলে, ভয় থেকে উপসর্গ সৃষ্টি হলে এই ওষুধটি প্রয়োজন হয়। সাধারণত যে সব কারণে পুরুষরা রোগাক্রান্ত হয়, সেসব ছাড়াও কতকগুলি অন্যকারণে মেয়েরা অসুস্থ হয়ে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ভয় থেকে প্রদাহ সৃষ্টি হতে কমই দেখা যায় কিন্তু স্বাস্থ্যবতী, প্লেথরিক ও উত্তেজনাপ্রবণ মেয়েদের ভয় থেকে জরায়, ওভারি বা ডিম্বকোষের প্রদাহ প্রায়ই দেখা যায়। ভয় থেকে গর্ভপাত বা আবরসন প্রায়ই ঘটে ঐসব ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকে অ্যাকোনাইট প্রয়োগ করলে গর্ভপাত হওয়া বন্ধ করা যাবে। ভয় বা আকস্মিক কোনও ভাবাবেগ রোগাক্রমণের সঙ্গে অ্যাকোনাইটের সূচ ফোটানো, জালা করা ও ছিড়ে যাবার মত বেদনা থাকতে দেখতে পারি। কোন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা যদি বলেন, "ডাক্তারবাবু, গর্ভের সন্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা করে কোন লাভ নেই, গর্ভাবস্থাতেই আমি মারা যাব" এই ক্ষেত্রে এটিই এই ওষুধটি প্রয়োগের প্রধানতম লক্ষণ। ঐরূপ ভয়ের চিত্রটি খুবই অদ্ভুত এবং এটা থেকেই মহিলাটির প্রকৃত স্বভাব ও প্রকৃতি প্রকাশ পাবে, রোহিণী তার মৃত্যুর দিনটি ঘোষণা করে। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায়ই অ্যাকোনাইট প্রয়োগের প্রয়োজন হয়, কারণ প্রায়ই ভয় পেয়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
প্রেথরিক ধরনের মহিলাদের যৌনাঙ্গের প্রদাহ প্রায়ই ঘটে। পুরুষ অপেক্ষা মহিলা ও শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যাকোনাইট বেশি কাজে লাগে। ঐ সব মহিলারা স্বাস্থ্যবতী, উত্তেজনাপ্রবণ ও খুব অনুভূতিপ্রবণ হয়ে থাকে। শুকনো কিন্তু ঠান্ডা -বায়ুতে ঠান্ডা লেগে পুরুষদের কোনও প্রদাহ হলে ওষুধটি কাজ দেবে এবং ঐ সদ্য থাকে। অ্যাকোনাইটের রূপ কাশিতে ল্যারিংক্স খুব স্পর্শকাতর হয়, শুকনো কিন্তু শীতল আবহাওয়ায় হঠাৎ ঠান্ডা লেগে রূপ কাশি হয়ে রাত্রির প্রথম ভাগেই শিশুর ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়।
বাসক্রিয়ার গোলযোগ, হাঁপানির প্রভৃতি অ্যাকোনাইট সৃষ্টি করতে পারে। মত ফুসফুসের ব্রঙ্কিয়োল-এ সংকোচন ক্যাপিলারী ব্রঙ্কাইটিস, প্লেথরিক ব্যক্তিদের হৃৎপিন্ডের উত্তেজনা, হঠাৎ ঠান্ডা লেগে অথবা শক্ থেকে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অ্যাকোনাইট প্রযোজ্য। স্নায়বিক ভাবে দুর্বল বা নার্ভাস, সহজেই উত্তেজিত হয়ে নানা ধরনের উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এমন প্লেথরিক ধরনের মহিলাদের শ্বাসকষ্টে অ্যাকোনাইট প্রকৃষ্ট ওষুধ। খুব কষ্টকর ও দ্রুত শ্বাস এবং তার সঙ্গে উদ্বেগ বা ভীতির লক্ষণ থাকে, হাঁপানির শ্বাসকষ্টের মত অবস্থার সঙ্গে ব্রঙ্কাস বা ব্রঙ্কিয়োল-এর মিউকাস মেমব্রেনে শুষ্কতা দেখা যায়। রোগীর শ্বাসকষ্ট এত তাঁর হয় যে হঠাৎ সে বিছানায় সোজা হয়ে উঠে বসতে বাধ্য হয়; হৃৎপিন্ডে তীব্র উত্তেজনার সঙ্গে দ্রুত গতির পালুস (ফ্লাটারিং), দুর্বল ও ঢবু চর্ করা অবস্থা হয়, রোগী গলা চেপে ধরে রিছানায় উঠে বসে, গায়ের ঢাকা ছাঁড়ে ফেলে দিতে চায়; মধ্যরাত্রির পূর্বে এই ধরনের শ্বাসকষ্ট হঠাৎ আরম্ভ হয়, ত্বক খবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তাঁর পিপাসা, তাঁর ভয় সব কিছ
একসঙ্গে দেখা দেয়। শ্বাসকষ্টে রোগী শারীরিক ও মানসিক ক্লেশ বোধ করে, হাটে হঠাৎ খুব বাহা হয়, তাঁব্রধরনের দম্ আটকা ভাব থাকে, ভয় ও আতঙ্ক থেকে তার দেহ প্রচুর থাম হয়ে ভিজে যায়। কিন্তু তব্যও তার ত্বক গরমই থাকে ভয় ও আতঙ্ক থেকেই এর জ্বর ও ঘাম হয়ে থাকে এবং তার পাল্স বা নাড়ী সুতোর মত ক্ষীণ হয়ে পড়ে। শ্বাসত্যাগের সময় রোগাঁ অপেক্ষাকৃত ভাল্ব বোধ করে। ল্যারিংক্স-এ সংকোচন
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্বাসগ্রহণের সময় দেখা দেয় সেইজনা সে বাসগ্রহণের সময় বেশি কষ্ট বোধ করে; একনাগাড়ে শ,কনো খুকখুক করা কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং নিউমোনিয়ার মত বিভিন্ন গোলযোগ দেখা যায়। অ্যাকোনাইট খুব দ্রুত প্রারা, ফুসফসে, শ্বাসযন্ত্রের ছোট ছোট বায়, পথ প্রভৃতিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। নিউমোনিয়ায় এইরূপ আকস্মিক ভাবেই প্রদাহ হয়ে এত মারাত্মক হয়ে পড়ে যে মিউকাস মেমব্রেন থেকে রক্ত চোঁয়াতে থাকে, চেরী ফলের মত লালবর্ণ ধারণ করে অথবা শ্লেষ্মা সাদাটে বা টকটকে নানা বর্ণের হয়। অস্থিরতা ও আতঙ্কের তীব্রতার সঙ্গে রোগী যখন তার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত ঘোষণা করে তা থেকেই অ্যাকোনাইটের রোগী চেনা যাবে। নিউমোনিয়াতে অ্যাকোনাইট-এ সাধারণত বাম ফুসফুসের উপরের অর্ধাংশে আক্রমণ ঘটে। প্রদাহের তীব্রতায় গলা, ল্যারিংক্স, ট্রেকিয়া, রঙ্কাস প্রায় সব জায়গা থেকে রক্ত চোঁয়াতে থাকে এবং মুখ ভরে রক্ত উঠতে পারে, প্রদাহের সঙ্গে বুকে খুব ব্যথা থাকে; ঝিলিক দেওয়া, ছিড়ে যাবার ও জ্বালা করা ব্যথায় চিৎভাবে কিছুটা উঁচু হয়ে শুয়ে থাকতে বাধ্য হয়, চিৎ হয়ে ছাড়া কোনদিকে পাশ ফিরে শুতে পারে না, কারণ তাতে তার কষ্ট বেশি হয়। কালির সঙ্গে যে রক্ত ওঠে সেটা যক্ষার মত নয়, এই রক্ত পীড়ায় যেখানে সালফার প্রয়োজন, তাদের হঠাৎ দেখা দেওয়া তরুণ পাঁড়ায় অ্যাকোনাইট প্রযোজ্য। যে সব আকস্মিক ভাবে দেখা দেওয়া পীড়ার প্রথম আক্রমণে অ্যাকোনাইট প্রয়োজন, বার বার অনুরূপ আক্রমণ ঘটতে থাকলে সেখানে সালফার প্রয়োজন হতে পারে।
অ্যাকোনাইটের পরে আশিকা ও বেলেডোনা অনেকক্ষেত্রে ভাল ফল দেয়। যে সব ক্ষেত্রে অ্যাকোনাইট প্রয়োগের পরও কিছু কিছু উপসর্গ থেকে যায় তাদের দূর করতে অবস্থা ভেদে আর্নিকা, বেলেডোনা, ইপিকাক, ব্রায়োনিয়া অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে সালফার প্রয়োগের প্রয়োজন হবে।
অ্যাকোনাইটের অনেকগুলি ডোজ অথবা বেশি শক্তিশালী ডোজ প্রয়োগের ফলে রোগীর আক্রমণের তীব্রতার উপশম যদি খুব ধীরে হতে থাকে অথবা রোগী যদি নিজেই ভুলভাবে অ্যাকোনাইট গ্রহণ করে থাকে তা হলে কফিয়া অথবা "নাক্সভমিকা" প্রয়োগে সেই কুফল দূর করা যায়।